হাদিস আরবি শব্দ। এর অর্থ কথা, বাণী ইত্যাদি। ইসলামি পরিভাষায়, মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর বাণী, কর্ম ও মৌনসম্মতিকে হাদিস বলা হয়।
হাদিসের গুরুত্ব
মানবজাতির হিদায়াতের জন্য আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে বহু নবি-রাসুল পাঠিয়েছেন। তাঁরা মানুষকে সত্য পথের সন্ধান দিতেন। হাতে-কলমে পুণ্য ও ন্যায় কাজের শিক্ষা দিতেন। তাঁরা ছিলেন মানবজাতির আদর্শ। আমাদের প্রিয় নবি হযরত মুহাম্মদ (স.) ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবি ও রাসুল। তাঁর পর আর কোনো নবি আসবেন না। তিনি ছিলেন সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। তাঁর শিক্ষা ও আদর্শই কিয়ামত পর্যন্ত সকল মানুষকে অনুসরণ করতে হবে। সুতরাং তাঁর সকল কথা ও কর্ম সংরক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি। এগুলো জানার মাধ্যমেই আমরা তাঁর আদর্শ অনুসরণ করতে পারি। হাদিস শরিফ হলো নবি করিম (স.)-এর জীবনের সকল কাজ-কর্মের সংরক্ষক। এর মাধ্যমেই আমরা মহানবি (স.)-এর সকল নির্দেশনা ও শিক্ষা জানতে পারি।
যদি হাদিস শরিফ না থাকত, তবে আমরা এসব কিছু জানতে পারতাম না। সুতরাং পুণ্য ও ন্যায়ের পথে চলার জন্য হাদিস শরিফের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।\
হাদিস ইসলামি জীবনব্যবস্থার দ্বিতীয় উৎস। আল-কুরআনের পরই হাদিসের স্থান। হাদিস আল-কুরআনের ব্যাখ্যাস্বরূপ। আল-কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বহু নির্দেশনা প্রদান করেছেন। মহানবি (স.) সেগুলো আমাদের সামনে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি সেসব বিধান সাহাবিগণকে হাতে-কলমে শিক্ষা দিয়েছেন। হাদিস জানার মাধ্যমেই আমরা এগুলো জানতে পারি। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَمَا أَتْكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهُكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا جِ
অর্থ: " রাসুল তোমাদের যা দেন তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা তোমাদের নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাক।" (সূরা আল-হাশ্র, আয়াত ৭)
মানবজাতিকে সুপথে পরিচালিত করার বাস্তব নির্দেশনা রয়েছে হাদিসে। এ বিষয়ে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন-
تَرَكْتُ فِيكُمْ أَمْرَيْنِ لَنْ تَضِلُّوا مَا تَمَسَّكُتُمْ بِهِمَا كِتَابَ اللَّهِ وَسُنَّةَ نَبِيِّه
অর্থ: আমি তোমাদের মাঝে দুটি জিনিস রেখে গেলাম, যদি তা শক্তভাবে ধরে রাখো তবে তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। আর তা হলো আল্লাহর কিতাব ও তার নবির সুন্নাহ বা হাদিস। (মুয়াত্তা মালিক)
আল্লাহ তায়ালার এ বাণীতে হাদিসের গুরুত্ব ফুটে উঠেছে। অতএব, আমরা হাদিস শরিফ জানব এবং সে অনুযায়ী যথাযথভাবে আমল করতে চেষ্টা করব।
সিহাহ সিত্তাহ (الصِّحَاحُ السِّنَّةُ )
সিহাহ শব্দের অর্থ শুদ্ধ, সঠিক। আর সিত্তাহ শব্দের অর্থ ছয়। বিশুদ্ধ ছয়টি হাদিস গ্রন্থকে একত্রে সিহাহ সিত্তাহ বলা হয়। প্রিয় নবি হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর সহিহ হাদিসসমূহ এ ছয়টি গ্রন্থে একত্র করা হয়েছে। এগুলোর সাহায্যে আমরা নির্ভরযোগ্য বর্ণনার মাধ্যমে মহানবি (স.)-এর হাদিসসমূহ জানতে পারি।
নিম্নে আমরা উক্ত ছয়টি হাদিস গ্রন্থের সংক্ষিপ্ত পরিচয় জানব:
১. সহিহ বুখারি
এ গ্রন্থের সংকলক হলেন আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনু ইসমাইল বুখারি (র.)। তিনি ইমাম বুখারি নামে খ্যাত। তাঁর নামানুসারেই তাঁর সংকলিত কিতাবকে সহিহ বুখারি বলা হয়। তিনি সর্বমোট ছয় লক্ষ হাদিস থেকে যাচাই-বাছাই করে তাঁর কিতাব সংকলন করেন। সহিহ বুখারি সবচেয়ে প্রসিদ্ধ হাদিস গ্রন্থ। বলা হয়, কুরআন মজিদের পর সর্বাধিক বিশুদ্ধ গ্রন্থ হলো সহিহ বুখারি।
২. সহিহ্ মুসলিম
এটি সিহাহ সিত্তাহর দ্বিতীয় গ্রন্থ। বিশুদ্ধতার দিক থেকে সহিহ বুখারির পরই এর স্থান। এ গ্রন্থের সংকলক হলেন আবুল হুসাইন মুসলিম ইবনু হাজ্জাজ আল কুশাইরি (র.)। তিনি তিন লক্ষ হাদিস থেকে বাছাই করে এ কিতাব সংকলন করেন।
৩. জামি তিরমিযি
এ কিতাবের সংকলক আবু ঈসা মুহাম্মদ ইবনু ঈসা আত-তিরমিযি (র.)। এ কিতাবে প্রায় সব বিষয়ের হাদিস সংকলন করা হয়েছে। এ কিতাব সম্পর্কে বলা হয়- 'যার ঘরে এ কিতাব থাকবে, মনে করা যাবে যে তার ঘরে নবি করিম (স.) আছেন এবং তিনি নিজে কথা বলছেন।'
৪. সুনানু আবু দাউদ
এ কিতাবের সংকলকের নাম আবু দাউদ সুলায়মান ইবনু আশআছ (র.)। এ কিতাবের বিন্যাস পদ্ধতি অত্যন্ত উন্নতমানের। সর্বমোট পাঁচ লক্ষ হাদিস যাচাই-বাছাই করে এ কিতাব সংকলন করা হয়।
৫. সুনানু নাসাই
এর সংকলক আহমদ ইবনু শুআইব আন-নাসাই (র.)। এর বিন্যাস পদ্ধতি উঁচুমানের। সিহাহ সিত্তাহের মধ্যে এ কিতাব খানার বিশেষ মর্যাদা রয়েছে।
৬. সুনানু ইবনু মাজাহ
এটি সিহাহ সিত্তাহের সর্বশেষ কিতাব। এর সংকলকের নাম আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনু ইয়াযিদ ইবনে মাজাহ।
আমরা বড় হয়ে হাদিসের এসব কিতাব পড়ব। এগুলো থেকে প্রিয় নবি (স.)-এর বাণী ও কর্ম সম্পর্কে জ্ঞান-লাভ করব। অতঃপর এগুলোর শিক্ষা অনুসারে নিজের জীবন পরিচালনা করব।
দলগত কাজ : শিক্ষার্থীরা দলে ভাগ হয়ে হাদিসের গুরুত্ব বর্ণনা করবে। |
বাড়ির কাজ: শিক্ষার্থী ছয়টি বিশুদ্ধ হাদিস গ্রন্থ ও এগুলোর সংকলকগণের নাম নিজ খাতায় লিখে একটি চার্ট তৈরি করবে । |